মো ঃ বশির আহম্মেদ :বরিশালের বাকেরগঞ্জের ১০ নং গারুরিয়া ইউ’পির খয়রাবাদ গ্রামের তালিকাভুক্ত রাজাকার ও পিস কমিটির সভাপতি মজিবুর রহমান মোল্লার পুর, এ এফ এম মাসুম মোল্লা বাচ্চুর দুর্নীতি অনিয়ম ও অত্যাচারে দিশেহারা খয়রাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও এলাকাবাসী। অভিযোগ সূত্রে জানা যায় খয়রাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এস,এস,সি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি কে অবজ্ঞা করে তার মন গড়া অর্থ ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা ধার্য করেন। ধার্যকৃত অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ হয়েছে। জেএসসি পরীক্ষার্থীদের বোর্ড নির্ধারিত ফি ৭০ টাকা হলেও ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করেন । ২০২০ সালে এস,এস,সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট সরকার ফ্রি করে দিলেও বিদ্যালয়ের সভাপতি ছাত্র প্রতি ৫০০ টাকা ধার্য করেন তার ধার্যকৃত অর্থ পরিশোধ না করলে তাকে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ করলে সভাপতি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ৫০০ সতর পরিবর্তে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ২৫০০-৩০০০ টাকা নির্ধারণ করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে এসএসসির ফরম পূরণ, প্রবেশপত্র, প্রশংসাপত, নবম শ্রেণির নিবন্ধন ও জে এস সির প্রবেশ পত্র, দেয়ার নামে মন গড়া অর্থ ধার্য করে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা উপায়ান্তর না পেয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি লিখিতভাবে চেয়ারম্যান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বরিশাল, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরিশাল, মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর, শিক্ষা সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রী বরাবর দরখাস্ত করেন। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ রুস্তম আলী শিকদার সভাপতির দুর্নীতি অনিয়ম ও অত্যাচারের প্রতিবাদ করে বিভিন্ন দপ্তরে দরখাস্ত করেন,যাহার তদন্ত চলমান ।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির সংবাদমাধ্যমকে জানান সভাপতি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন, আমি তাতে অপারগতা প্রকাশ করলে সভাপতি আমার কাছ থেকে রেজুলেশন করে সহকারী প্রধান শিক্ষক কমল চন্দ্র মালাকার সহ তিন জনকে অর্থ আদায়ের জন্য দায়িত্ব ভার প্রদান করেন।
সেই মোতাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র ছাত্রী দের কাছ থেকে বোর্ড নির্ধারিত ফির কয়েক গুণ বেশি অর্থ উত্তোলন করে স্কুল ফান্ডে জমা না দিয়ে দুজনের যোগসাজশে আত্মসাৎ করেন । এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সহকারি লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ দেয়ার নামে সাত লক্ষাধিক টাকা ঘুষ বাণিজ্য ও সরকারি বিধি উপেক্ষা করে তার ৪৬ বছর বয়সী স্ত্রী মোসাঃ নার্গিস বেগমের এইচএসসি সার্টিফিকেট ত্রুটিপূর্ণ হওয়া সত্বেও অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেন।
ছাত্র-ছাত্রীদের মাসিক বেতন ভাতা আত্মসাৎ করা সহ সকল দুর্নীতির প্রতিবাদ করিলে আমাকে অনৈতিকভাবে ক্ষমতার দাপটে সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিপক্ষে সাক্ষী দেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা মোবারক আলী জোমাদ্দারের পুত্র শাহিন জোমাদ্দারকে হুমকি দেওয়ায় বাকেরগঞ্জ থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছেন জাহান নাম্বার ১২৭৯/২৮/৯/২০২০
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকমল হোসেন জানান বোর্ড থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে দুর্নীতি ও অনিয়ম, তদন্তের চিঠি আসলে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমার উপরে তদন্তভার ন্যস্ত করেন। আমি তদন্তের স্বার্থে খয়রাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি এ এফ এম মাসুম মোল্লা ও সহকারি প্রধান শিক্ষক কমল মালাকার ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হুমায়ুন কবির কে তদন্তের সহযোগিতা করার জন্য নোটিশ প্রধান করি।
তদন্তের স্বার্থে সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক উপস্থিত হননি। আমি সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা ও চুলছেরা বিশ্লেষণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করি। সভাপতি আমাকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে ফোন করে বিভিন্ন রকম হুমকি-ধামকি দিয়ে শাসিয়েছেন। বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের প্রতিবেদন চাওয়ায় সঠিক তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কে তদন্তভার দেওয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বরিশালের চেয়ারম্যান সংবাদমাধ্যমকে জানান। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রী ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কর্তৃক দরখাস্ত পেয়েছি। সঠিক তদন্তের জন্য বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন আসার পরে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মানিক হোসেন মোল্লা জানান খয়রাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মাসুম মোল্লা বাচ্চুর বাবা মজিবুর রহমান মোল্লা পাকিস্তানের এমপি ও পার্লামেন্টের সেক্রেটারি ছিলেন তিনি বরিশাল জেলা পিস কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ সরকারের গেজেটেট তালিকাভুক্ত রাজাকার ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরে দীর্ঘদিন তিনি হাজতবাস করেন।
উল্লেখ্য,বিগত জামাত বিএনপির আমলে এ এফ এম মাসুম মোল্লা বাচ্চু জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মামলা হামলা ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে গারুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান হন। তৎকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে মানুষ কোপানো ঘরে আগুন দেয়া, কুর পোড়া, সহ একাধিক মামলা হয়। সেই অত্যাচারের কথা সাধারণ জনগণ অজও ভুলতে পারেনি। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলেও একজন দেশ বিরোধী রাজাকারপুত্র এত ক্ষমতা কোথায় পায় জনমনে প্রশ্ন। এএফএম মাসুম মোল্লা বাচ্চুর হাত থেকে খয়রাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ এলাকাবাসী নিস্তার চেয়ে, মাননীয় প্রধান-মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন। এ এফ এম মাসুম মোল্লা বাচ্চু তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বিকার করেন।
তবে রাজাকারের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।