মোঃ বশির আহাম্মেদ : তথাকথিত ব্যারিস্টার এলাহীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। শনিবার ২৫ জুলাই বাকেরগঞ্জের পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের বড় রঘুনাথপুর গ্রামের কয়েকটি ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী মোঃ রিপন, মোহাম্মদ লাল মিয়া হাওলাদার ও বকুল বেগম। তারা বলেন, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার বড় রঘুনাথপুর গ্রামে প্রতারণার জাল বিছিয়ে আসছেন প্রিন্স এলাহী। নিজেকে ব্যারিস্টার পরিচয় দিলেও তিনি আদলতে কোনো আইনজীবী নন। প্রতারণা করার জন্যই এরকম একটি পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করেছেন তিনি। ভুক্তভোগী মো. রিপন ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, আমাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমএলএসএস পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রিন্স। চাকরি না পাওয়ায় তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে উল্টো আমাকেই পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বলে, আমি একজন ব্যারিস্টার। জানিস কত কিছু করতে পারি।
এছাড়াও প্রতারক প্রিন্স এলাহীর প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কাউকে চাকরি দেওয়া, কাউকে পদোন্নতির ব্যবস্থা করে দেওয়া, আবার কাউকে চাকরির লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার এমন নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। গত চার-পাঁচ বছরে কারও কাছে এক লাখ, কারও কাছে দুই লাখ এমন বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিলেও যেসব প্রলোভন দেখিয়েছেন, তার কোনোটিই পূরণ করতে পারেননি। তবে চাকরির লোভে পড়ে ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দেওয়া পরিবারগুলো আর সে টাকা উদ্ধার করছে পারছে না। উল্টো টাকা চাইতে গেলে হুমকি এবং মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে তাদের।
হাসান মাহমুদ বলেন, প্রিন্স কামরান ওরফে ব্যারিস্টার প্রিন্স ইলাহী আসলে ভুয়া ব্যারিস্টার। কেউ বলতে পারে না তিনি কবে, কোথা থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেছেন। তার প্রকৃত নাম প্রিন্স কামরান। তার বাবা স্কুল শিক্ষক হাবীবুর রহমান।
হাসান মাহমুদ আরো বলেন, বরিশাল আদালতে চাকরি হবে এমন আশ্বাস দিয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চার লাখ টাকা নেন প্রিন্স। গরু পালতাম আমরা। সেই গরু বিক্রি করে দুই লাখ টাকা দিয়েছি। ৪০ কড়া (৮০ শতাংশ) জমি বন্ধক রেখে মোট তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা তাকে দেই। এরপর আবারও টাকা চাইলে যত গাছ-গাছালি আর হাঁস-মুরগী ছিল, সব বিক্রি করে বাকি ৪০ হাজার টাকাও দেই। সেটা ২০১৬ সালের কথা। সব টাকা বুঝে নিলেও আমরা চাকরি এখনো হয়নি। সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে সংসারও চলে না। কিছুদিন আগে আমার মা স্ট্রোক করে বিছানায় পড়ে আছেন। টাকা চাইতে গেলে উল্টো মামলার ভয় দেখান। বন্ধক জমি কোনোদিন বের করতে পারব কি না, তাও জানি না। এখন আর গরু পালার মতো টাকাও নেই। আর বেশিরভাগ সময় প্রিন্সের মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকে
। এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরও জানিয়েছি, তবু টাকা পাচ্ছি না।
ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার ছোট ভাইকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে নিয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। ২০১৭ সালে সেই টাকা দিয়েছি। এখন ২০২০ সাল। চাকরিও নেই, টাকাও নেই। টাকা চাইলে বলেন, টাকা দেবে। কিন্তু আজকাল করতে করতেই বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে।
জাকারিয়া নামে একজন বলেন, বাংলাদেশ বেতারে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে নিয়েছে ছয় লাখ ৯০ হাজার টাকা। চাকরি না হলে গত দুই বছরে এক লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। বাকি টাকার কোনো হদিস নাই। এখন টাকা চাইলে অস্বীকার করে বলেন, কিসের টাকা, তোরা কোনো টাকা পাবি না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জের হাবিবুর রহমানের ছেলে প্রিন্স কামরান। তিনি ২০০২ সালে জিপিএ ৩ দশমিক ১৩ পেয়ে এসএসসি এবং দুই বার অকৃতকার্য হওয়ার পর তৃতীয় চেষ্টায় ২০০৬ সালে জিপিএ ৩ দশমিক ১০ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর কিছুদিন ঢাকায় ছিলেন। এলাকাবাসী বলছেন, এরপর আচমকাই তারা জানতে পারেন, প্রিন্স কামরান ব্যারিস্টার হয়েছেন। নামের সঙ্গে ব্যারিস্টার ডিগ্রি লাগিয়ে ও জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের নেতা পরিচয়ে এলাকায় পোস্টারিং করতে শুরু করেন। এই পরিচয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছেন।
ব্যারিস্টার সেজে প্রতারণা সংবাদ সম্মেলনে, বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
