সেনা কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কাজে দক্ষদের বিষয়টি মাথায় রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরাই যেন সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন, সে দিকে লক্ষ্য রাখতেও বলেছেন তিনি।
রোববার ঢাকা সেনানিবাসে সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত এবং সুসংহত করতে একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করবো, এই নির্বাচনী পর্ষদ উপযুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করবেন। প্রশিক্ষণ এবং একাডেমিক যোগ্যতার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে যারা দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে তাদেরকেও বিবেচনায় নিতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যারা অবদান রেখেছে তাদেরও যেন মূল্যায়ন হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও গৌরবময় অধ্যায়।
আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্তমৌলিক এবং মুখ্য বিষয়। আপনাদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ন্যস্ত হয় তাদেরই হাতে যারা দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। পদোন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষা, মনোভাব, সামাজিকতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিরীক্ষার পাশাপাশি নেতৃত্বের গুণাবলী, পেশাগত দক্ষতা, শৃঙ্খলাবোধ, সততা, বিশ্বস্ততা, আনুগত্য বিবেচনায় নিতেও বলেন শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে জাতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনী আরও বেশি সম্পৃক্ত হবে এমন আশা প্রকাশ করে সরকার প্রধান। এজন্য যোগ্য, দক্ষ, কর্মক্ষম এবং দেশপ্রেমিক অফিসারদের হাতে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে গুরুত্ব দেন তিনি। সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য ট্রেস (ট্যাবুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কমপ্যারেটিভ ইভ্যালুয়েশন)-এর মত ‘আধুনিক পদ্ধতির প্রচলন’ করায় নিজের ‘আনন্দিত’ হওয়ার কথাও জানান শেখ হাসিনা।
ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে তাদের উন্নয়নে নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশংসনীয় কাজের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও কর্তব্যবোধের প্রত্যয় বিশ্ব দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ পুরো জাতিকে বিরল সম্মানে গৌরবান্বিত করেছে। দেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেনাবাহিনীর সদস্যরা যেভাবে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছে, তার প্রশংসাও করেন তিনি। এর ফলে সেনাবাহিনীর উপর সকলের আস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড় ধসের পর আটকে পড়াদের উদ্ধার এবং দুর্গতদের আশ্রয়, খাবার ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও জঙ্গি তৎপরতা দমনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও সিলেটের আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর কমান্ডো ইউনিটের জঙ্গিবিরোধী অভিযান দেশে ও বিদেশে সেনাবাহিনীর উন্নত প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন; যার আহ্বানে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের সময়েই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যাত্রা শুরু। বঙ্গবন্ধুর শাসনমলে সেনাবাহিনীতে নতুনভাবে গড়ে তোলা হয় এবং সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার কথাও জানান শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাপ্রধান লে. জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূইয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীরসেনাবাহিনীতে পদোন্নতিতে দক্ষদের প্রাধান্য দিতে আহ্বান
