নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে কিছু নব্য কথিত সাংবাদিকরা জড়িয়ে পড়ছে বড় বড় অপরাধের সাথে । ৫/৭ জনের একটি চক্র সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি ব্যাপক চাদাবাজী করে বেড়াচ্ছে । কোন রাজনৈতিক নেতা কিংবা সিনিয়র সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে এরা বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে । গত বৃহস্পতিবার এই চক্রের ৫ জন চাদাবাজী করতে গিয়ে আটক হলেও এখনো ধরা পরেনি চক্রের মুল হোতারা । দৈনিক বাংলাদেশ বাণী পত্রিকা থেকে চাঁদাবাজি ও হলুদ সাংবাদিকতার দায়ে বহিষ্কার হওয়া সৈয়দ মেহেদী ওরফে কবির খান, হকার মাইনুদ্দিন সহ তাদের সহযোগীরা এখনো ধরা পরেনি । বরিশালে নানান অপরাধের সাথে জড়িত এই চক্র । গ্রেফতার হওয়া গাজা আরিফ ছিল মেহেদির একান্ত সহচর । তাই এই পুরো চক্রকে আইনের আওতায় এনে বরিশালের মিডিয়া অঙ্গন কলংক মুক্ত করা এখন খুবই জরুরী । এ ব্যাপারে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দেরই এগিয়ে এসে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ বলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা । অবশ্য কোতয়ালী মডেল থানার ওসি শাহ্ মো. আওলাদ হোসেন জানান, এক প্রেমিক জুটিকে অপহনের পর জিন্মি করে চাঁদাদাবীর ঘটনায় থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতারকৃত ৫জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে ।
বরিশাল নগরীর কাঠপট্টি রোডের ধানসিড়ি আবাসিক হোটেল থেকে এক প্রেমিক জুটি অপহরনের পর একটি আঞ্চলিক পত্রিকা অফিসে ১২ ঘন্টা জিন্মি রেখে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবীর ঘটনায় তথাকথিত ৩ সাংবাদিক এবং এক ছাত্রলীগ নেতা সহ ৫জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই প্রেমিকের ছোট ভাই বাদী আবুল কালাম বাদী হয়ে আটক ৫জনের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার অপহরন এবং চাঁদা দাবীর অভিযোগে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করে পুলিশ।
আটককৃতদের জিন্মিদশা থেকে উদ্ধারকৃত প্রেমিক ওবায়দুর রহমান রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি নরুয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে এবং তার প্রেমিকা মোসাম্মত শিমুল আক্তার বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া গ্রামের নজরুল মোল্লার মেয়ে। আটককৃত ৫ জন আরিফ হোসেন ওরফে গাজা আরিফ, মো. রাসেল , বাবু, স্থানীয় দৈনিকের সাংবাদিক পরিচয়ধারী, সোহাগ ওরফে পাসপোর্ট সোহাগ বিএম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা এবং অমিত পাসপোর্ট সোহাগের বন্ধু। এদের সকলের বাড়ি বরিশাল নগরীতে।
থানায় দায়ের হওয়া মামলায় বাদী আবুল কালাম অভিযোগ করেন, তার বড় ভাই ওবায়দুর রহমান তার প্রেমিকা শিমুল আক্তারের সাথে দেখা করতে গত ১১ অক্টোবর বরিশাল নগরীতে আসে। পরে তারা কাঠপট্টি রোডের ধানসিড়ি আবাসিক হোটেলের ৩০৯ নম্বর কক্ষে ওঠেন। কিছুক্ষন পর আসামী আরিফ হোসেন, মো. রাসেল, বাবু, সোহাগ ওরফে পাসপোর্ট সোহাগ ও অমিত ওই কক্ষে গিয়ে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তাদের কাছে চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা একজন কাজী (ম্যারেজ রেজিস্ট্রার) ডেকে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে হোটেলে অবস্থানকালে আসামী রাসেল তার ভাইয়ের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ওইদিন রাত ২টার দিকে প্রেমিক জুটিকে হোটেল থেকে নামিয়ে নগরীর কাউনিয়া বটতলা এলাকায় জনৈক কবিরের বাড়িতে নিয়ে আটকে রেখে মুঠোফোনে ওবায়েদুলের আত্মিয় স্বজনের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দিলে তাদের দুই জনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকী দেয়।
পরদিন ১২ অক্টোবর বাদী তার ভাইয়ের মুঠোফোনে বিকাশের মাধ্যমে ১৭ হাজার ২শ’ টাকা পাঠায়। আসামীরা তার ভাইয়ের কাছ থেকে বিকাশের পিন নম্বর নিয়ে ওই টাকা উত্তোলন করে। ওইদিন (বুধবার) বিকেল ৩টায় আসামীরা কবিরের ঘর থেকে তাদের নগরীর হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশালের আঞ্চলিক দৈনিক বর্তমান সময় ও বরিশালের কন্ঠ পত্রিকা অফিসে নিয়ে আটকে রাখে। এরপর বারবার তাদের দাবীকৃত ২ লাখ টাকা দেয়ার জন্য জিন্মি থাকা দুইজন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর মুঠোফোনে চাপ সৃষ্টি করে। বাদী তাদের মুঠোফোনে টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে শান্ত রাখেন। বুধবার রাতে বাদী বরিশাল নগরীতে এসে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর বুধবার রাত আড়াইটায় বরিশালের আঞ্চলিক দৈনিক বর্তমান সময় ও বরিশালের কন্ঠ পত্রিকা অফিসে অভিযান চালিয়ে জিন্মি থাকা প্রেমিক জুটিকে উদ্ধার এবং তথাকথিত ৩ সাংবাদিক ও এক ছাত্রলীগ নেতা সহ ৫ জনকে আটক করে।
এ ঘটনায় ওবায়েদুর রহমানের ছোট ভাই আবুল কালাম বাদী হয়ে ওই ৫জনের বিরুদ্ধে অপহরন এবং চাঁদাবাজীর মামলা করেছে।
মামলার এসআই জাহেদুর রহমান জানান, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আটককৃতদের মধ্যে বাবু, আরিফ হোসেন ও মো. রাসেল কবির স্থানীয় দৈনিকের সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছে। সোহাগ ওরফে পাসপোর্ট সোহাগ বিএম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা এবং অমিত সোহাগের বন্ধু বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।